স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লামা বন বিভাগের ডলুছড়ি রেঞ্জ এলাকায় মানুষের চাষের ফসল, সৃজিত বাগানে বন্যহাতি পাহাড় থেকে নেমে এসে শ্রেণী- অ-শ্রেণী ভূক্ত জায়গার ফসলের ফলমূল, বাগানের আমলকী, জলপাই, পেয়ারা, আমড়া, আম, ডুমুর, জাম, বহেরা, পেঁপে, সজিনা, বাঁশসহ ন্যাচরাল কলাগাছ,লতাপাতা খাচ্ছে। এর সাথে নষ্ট হচ্ছে জমিক্ষেত।
সরজমিনে বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে কথা বলে জানাযায়, পাহাড়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ বন্যহাতির খাদ্যের অভাব সৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ে থাকা হাতিগুলো প্রায় পাহাড় থেকে নেমে এসে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এরপর মানুষের বসতঘরের ধানসহ কলাগাছ ফসলাধি খেয়ে ফেলছে এবং বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে।
এদিকে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় বন্যহাতির আক্রমণে মো. কালু (৫০) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ইছহাক মেম্বার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কালু কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের আক্কেল আলীর ছেলে। তিনি ইছহাক মেম্বার পাড়ায় একটি পানের বরজে কাজ করতেন।
উপজেলার সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, পাহাড়ে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় বন্যহাতির পাল লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে প্রায় হানা দিচ্ছে। শনিবার ভোর ৪টায় গহীন পাহাড় থেকে একদল বন্যহাতি ইছহাক মেম্বার পাড়ায় নেমে আসে। পরে হাতিগুলো খাবারের খোঁজে একটি খামারের ঘরে ঢুকে পড়ে। এ সময় হাতির আক্রমণে ওই ঘরে ঘুমিয়ে থাকা মো. কালু গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা কালুকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি এ সময় আরো বলেন, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পরে ঘর ভাঙা শুরু করে। ঘরে থাকা ধান চাল খেয়ে ফেলে। রাত জেগে আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে বাড়িঘর পাহারা দিয়েও হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। হাতিগুলো এখনো ওই এলাকায় অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি।
লামা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী জানান, হাতির আক্রমণে কালু নামে এক শ্রমিক নিহত হয়ছে। ক্ষতিগ্রস্তকে বিধি মোতাবেক বনবিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাহাড়ে খাদ্য সংকটের কারণে হাতির দল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় সুরতহাল শেষে কালুর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান লামা থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন।
লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী আরো বলেন, এ শুস্ক সময়ে পাহাড়ে হাতির খাদ্য নেই বললেই চলে। সে কারণে, ধান ফসলাধি খাওয়ার জন্য পাহাড় থেকে হাতি নেমে এসেছে লোকালয়ে। যেখানে হাতির বসবাস ছিলো সেখানে মানুষের বসতি, সৃজিত বাগান ও বাগান বাড়ী গড়ে উঠায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।