শৈহ্লাচিং মারমা, পাহাড়ের কন্ঠস্বর- রুমা প্রতিনিধি (বান্দরবান)ঃ
শিক্ষক হলেন জনগণের প্রদীপ। দেশের স্তম্ভ। আগামী আদর্শ প্রজন্ম তৈরি করতে আদর্শ শিক্ষকের জুড়ি নেই। ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে শিক্ষকের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকতা শুধু পড়ানোর নাম নয়, চিন্তা, চেতনা, নৈতিকতা সংশোধনের নাম। আর সেই শিক্ষা গুরুদের রুমা উপজেলায় দেওয়া হলো সম্মাননা।
অবসরপ্রাপ্ত ২৫ শিক্ষককে সম্মাননা জানাতে
২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী রোজ বুধবার বেলা ১১ টার সময় রুমা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মাননা অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত এ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
সম্মননা অনিষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী।
রুমা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও রুমা অগ্রবংশ অনাথালয়ের পরিচালক উঃ নাইন্দিয়া ভিক্ষু।
সম্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে য়ারা বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিটি থালাংদির বম, মংথোয়াইচিং মারমা ও রত্না রাণী দাশসহ অন্যান্যরা। এছাড়াও বক্তব্য দেন বিদায়ী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার ধর।
শিক্ষা গুরুদের দ্বারা যা অর্জন করেছিঃ
শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। তারা জ্ঞানশূন্য মানবশিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
শিক্ষকরা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার ব্যাপারে শিক্ষকদের অবিস্মরণীয় অবদান। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষকের। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়, বরং ভালো মানুষ করে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বটাও থাকে শিক্ষকের ওপর। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয়, অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি ধৈর্যশীল।
শিক্ষাগ্রহণ ছাড়া জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে পারে না। মানবাত্মার সঠিক বিকাশের প্রধান উপায় হলো- শিক্ষালাভে জ্ঞানবৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের সত্তা উপলব্ধি করে জীবন সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করা। শিক্ষক হচ্ছেন, শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথপ্রদর্শক। কারও পক্ষে কোনো শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই-পুস্তক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে, সে কোনো দিন শিক্ষার পূর্ণতায় পৌঁছতে পারে না।
শিক্ষকের দৃষ্টান্ত একজন মালির মতো। একটা বাগানের সমৃদ্ধি যেমন মালির পূর্ণ দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে, তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতি-অবনতি শিক্ষকদের দৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।
যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে এবং মানুষকে শিক্ষা দান করে, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে তাকেই মহান বলা হয়। সে সূর্যের মতো অপরকে আলো দান করে এবং নিজেও আলোকময়।
শিক্ষকরা আমাদের আত্মবোধ গড়ে দেন। তারাই আমাদের আত্মার আত্মীয়, আপনজন। জ্ঞানহীন মানুষ যদি পশুর সমান হয়ে থাকে, সেই মানুষের মনে জ্ঞানের আলোয় প্রকৃত মানুষ করে তোলে একজন আদর্শবান শিক্ষক। একজন মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ-দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আবার সেই শিক্ষার্থী জীবনে যত বড়ই হোক- গুরুজনকে ভক্তিভরে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্র-শিক্ষকের এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাঁথুনির সম্পর্ক।
মানুষ প্রাকৃতিকভাবে মূর্ত ও প্রত্যক্ষ নমুনা দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়। পঠিত বই বা শ্রুতবাণী দ্বারা তেমন প্রভাবিত হয় না। আর একজন ছাত্রের সামনে মূর্ত নমুনা হলো, তার আদর্শ শিক্ষক। তার মন-মানসিকতা গঠন ও পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। ছাত্র প্রথমে শিক্ষককে দেখে এবং নিজের অজান্তেই তার অনুসরণ করতে থাকে। পিতা মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ছাত্রের জন্য কর্তব্য। পিতা-মাতা ও শিক্ষকের মাধ্যমে ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যতের পথ। তাই তাদের যা আদেশ ও নিষেধ তা মেনে চলা উচিত। পিতা-মাতা ও শিক্ষক আমাদের সর্বদা মঙ্গল কামনা করেন।
এ সম্মাননা অনুষ্ঠানটি ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক- মংমং মারমার সঞ্চালনায় এ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, চিত্ররথ চাকমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক- চিত্ত রঞ্জন চাকমা।
অনুষ্ঠানটি উপজেলার ৬৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতি এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।