এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন, লামাঃ
সোমবার দিনভর নানান নাটকীয়তার পর অবশেষে বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ডাঃ শোভন দত্ত। এর আগে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কলসালটেন্ট (এ্যানসথেসিওলজি) ডাঃ নুর মুহাম্মদ প্রশাসনিক জটিলতা দেখিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে রাজি হননি। অবশ্য বিকাল সাড়ে ৪টায় স্থানীয়দের তোপের মুখে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালে সিনক্রিয়েড ঘটনা করতে আসা বহিরাগত ৩ জনকে আটক করে লামা থানা পুলিশ।
পুলিশ বহিরাগত যে তিনজনকে আটক করে তারা হলেন, মোঃ রিয়াদ(৪৫), তমিজিদুল ইসলাম(২৫) ও মোঃ তোফায়েল। তারা চকরিয়া থেকে এসেছে বলে জানায়।
সোমবার (১০ মার্চ) ডাঃ শোভন দত্ত লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করতে আসলে এ ঘটনা ঘটে। সে সময় স্থানীয় দুইটি পক্ষ পরস্পর বিরোধী অবস্থান নেয়। পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ডাঃ শোভন দত্তের বিরোদ্ধে ব্যানার লাগানোর সময় ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়। পরে আটককৃতদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে পুলিশ ছেড়ে দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এখিং মারমাকে রোয়াংছড়ি উপজেলায় বদলীর আদেশ জারী করে। একই আদেশে ডাঃ শোভন দত্তকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে লামা উপজেলায় বদলী করা হয়।
অপরদিকে ডাঃ শোভন দত্তের যোগদান ঠেকাতে একটি পক্ষ স্যোশাল মিডিয়া লিখালিখি করে ও প্রশাসনিক তদবীর চালিয়ে অবস্থান নেয়। স্যোশাল মিডিয়ায় ডাঃ শোভন দত্তের বিরোদ্ধে লিখালেখির পর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খানজামা লুসাই গত ৯ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবরে প্রেরিত ডিও লেটার প্রেরন করেন। সেখানে ডাঃ শোভন দত্তের বিরুদ্ধে পূর্বের কর্মস্থলের নানান অভিযোগ আনা হয়।
ডিও লেটারে অনুরোধ করে আরও বলা হয়, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কলসালটেন্ট (এ্যানসথেসিওলজি) হিসেবে কর্মরত ডাঃ নুর মুহাম্মদকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার শূন্য পদে প্রেষনে পদায়ন/নিয়োগ করার জন্য।
এদিকে বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-নার্স ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আছেন মাত্র দু’জন। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে দু’জন মেডিকেল অফিসার, ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন ৭ জন, ডেন্টাল সার্জন একজনসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২টি। এর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র তিনজন। ৩২ জন নার্সের পদে কর্মরত রয়েছেন মাত্র সাতজন। চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে হাসপাতালটি থেকে সেবা বঞ্চিত স্থানীয়রা। সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচার হয় না। অপারেশন না হওয়ায় জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) ডা. নুর মোহাম্মদ হাসপাতালে আসেন না। যার করনে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে চান না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাঃ নূর মোহাম্মদ দায়িত্ব হস্তান্তর না করতে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া থেকে বহিরাগত বেশ কয়েকজন যুবক নিয়ে হাসপাতালে নিজ কক্ষে অবস্থান নেন। যার কারনে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সময় দু’পক্ষের লোকজনদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দিনভর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে চকরিয়া থেকে আসা তিন যুবক ডাঃ শোভন দত্তের বিরোদ্ধে লিখা ব্যানার লাগানোর সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩জন বহিরাগতকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ বহিরাগত যে তিনজনকে আটক করে তারা হলেন, মোঃ রিয়াদ(৪৫), তমিজিদুল ইসলাম(২৫) ও মোঃ তোফায়েল বলেন, ডাঃ শোভনের বিরোদ্ধে লিখা ব্যানার লামা হাসপাতালে লাগাতে আমাদেরকে ডাঃ নুর মোহাম্মদ টাকাদেয়। আমরা চকরিয়া থেকে এসেছি। আমাদেরকে ব্যানার গুলি দেয় চকরিয়ার দুইজন ডাক্তার। আমরা তাদের কথামতো লামায় এসে হাসপাতালে ব্যানার টাঙ্গীয়ে দেওয়ার সময় পুলিশ আমাদের ধরে ফেলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পন কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ডাঃ নুর মোহাম্মদ জানান, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়া ও হস্তান্তর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি ডাঃ শোভন দত্তের কাছ থেকে প্রপার্স ডকুমেন্ট অর্থাৎ বান্দরবান জেলা পরিষদ এর অর্ডার চেয়েছি। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেনি। সে কারণে আমি দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাইনি। উল্টো ডাঃ শোভন দত্ত সোমবার সকাল থেকে বহিরাগত ও অপরিচিত লোকজন নিয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এদিকে পুলিশকৃত আটক তিনজনের সিকারোক্তির বিষয়ে ডাঃ নুর মোহাম্মদ বলেন, আমি তাদেরকে চিনিনা। আমি কোন বহিরাগত লোকজন আনিনি।
এদিকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পন কর্মকর্তার দ্বায়িত্ব নিতে আসা ডাঃ শোভন দত্ত জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে বদলী করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ছড়াপত্র নিতে একটু দেরি হয়। আমি লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমি দ্বায়িত্ব নিতে ১০মার্চ সকাল আসি। এসে দেখতে পাই ডাঃ নুর মোহাম্মদ হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে
বহিরাগত লোকজন নিয়ে হাসপাতালের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ চালাচ্ছে। এরপরও আমি ডাঃ নুর মোহাম্মদের কাছে গিয়ে আমার যোগদানের কাগজ দেওয়ার পরও তিনি আমাকে যোগদান করাইনি। উল্টো তিনি আমাকে হুমকী দেয়। এর পর আমি বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন স্যারকে ডাঃ নুর মোহাম্মদের অশোভন আচরণের বিষয়টি জানাই। এবং আরো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এ বিষয়টি জানাই। এর মাঝে ডাঃ নুর মোহাম্মদ চকরিয়া উপজেলা থেকে কিছু বহিরাগত লোকজন এনে আমার বিরোদ্ধে লিখে এনে হাসপাতালে ব্যানার টাঙ্গায়। এ সময় পুলিশ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১০ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টার সময় আমাকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব করতে বাধ্য হয় ডাঃ নুর মোহাম্মদ। আমার বিরোদ্ধে ডাঃ নুর মোহাম্মদ যে অভিযোগ এনেছে তা সত্য নয়। নিজের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।