গিজার মরুভূমির ফারাও খুফুর নৌকা
এটি হলো খুফুর নৌকা। ১৯৫৪ সালের ২৪ এপ্রিল গিজার মরুভূমির দক্ষিণ দিকে ফারাও খুফুর পিরামিডের পাশেই কাজ করছিলেন আরকিয়োলজিস্ট মোহাম্মদ জাকি আর তার সহকারী গারাস ইয়ানি। ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া এক্সকাভিশনগুলির কারণে তৈরি হওয়া আবর্জনা সরাছিলেন তারা। কিন্তু এইসব ছাইপাশ ঘাটতে ঘাটতেই তাদের হাতে চলে এলো এক অমূল্য রত্ন। সেখানে তারা খুঁজে পেলেন অনেকগুলো বিশাল আয়তকার চুনাপাথরের টুকরো। পাশাপাশি একে অপরের গায়ে লাগানো টুকরো গুলো দেখেই মনে হচ্ছিল মাটির নিচে কোনো গোপন কক্ষের উপর ঢাকনার কাজ করছে ওগুলো।
২৫শে মে ১৯৫৪ সালে সেই ঢাকনা সরিয়ে ভেতরে ঢোকার দিন স্থির হল। তবে ওই দিনই মোহাম্মদ জাকির জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। তার ছোট্ট মেয়েটি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হল। অবশেষে সে মারা গেল। জাকি আর এই কাজে ফিরলেন না।
এরপর গারাস ইয়ানি তার সঙ্গী কামাল ইয়ানির সঙ্গে মিলে সেই পাথরের ছাই উপর থেকে ভেঙে ফেললেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেই গর্ত থেকে আবিষ্কার হল ১২২৪টা সিডার কাঠের টুকরো।
তবে প্রাথমিকভাবে বোঝা গেল না এই কাঠের টুকরো গুলি ঠিক কি কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল?
সেই রহস্য উদ্ঘাটনার জন্য ডাক পরল আহমেদ ইউসুফ নামের মিশরীয় আরকিটেক্ট’এর। লোকটা প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে পাওয়া পৃথক হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্রকে একত্র করে তার রুপ দেওয়ার ক্ষেত্রে এক এবং অদ্বিতীয়। এরপর প্রায় ছ-মাস ধরে প্রচেষ্টার পর আহমেদ ইউসুফ এই ১২২৪টা আলাদা আলাদা সিডার কাঠের টুকরোকে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করলেন এক নৌকা। কাঠের কার্বন ডেটিং করে জানা গেল এই নৌকা চলাচলের সময়কাল।
একে তো খুফুর পিরামিডের পাশে খুঁজে পাওয়া কাঠের টুকরো, তার ওপর সময়কালও হুবহু মিলে গেল ফারাও খুফুর রাজত্বকালের সময়ের সঙ্গে।সবশেষে একটি কাঠের টুকরোর গায়ে খুঁজে পাওয়া গেল হাইরোগ্লিক হরফে লেখা ফারাও খুফুর নাম। অতএব একে একে দুই করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা নিশ্চিত হলেন, এই নৌকা হল ফারাও খুফুর নৌকা।
তবে খুব সম্ভবত ফারাও ফুফু কখনো এই নৌকা চড়েননি। আসলে এই নৌকা তার মৃত পিতাকে উৎসর্গ করেছিলেন খুফুর পুত্র জেদেফ্রে। শেষ অবধি এমন ধারণাই দিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এই ধারণার পেছনে রয়েছে প্রাচীন মিশরের এক আশ্চর্য ধর্মীয় প্রথা…
[এস.কে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন]